আল্লাহ তা’আলার ঘোষনা-
“আমি আদমকে পৃথিবীতে আমার প্রতিনিধি নিযুক্ত করব” (সূরা বাকারা: ৩০)
“আর নিঃসন্দেহে আমি আদম সন্তানদেরকে সকল সৃষ্টির ওপর শ্রেষ্ঠত্ব ও সম্মান দান করেছি” (সূরা বনি ইসরাইল: ৭০)
মানব সৃষ্টির প্রথম ভাগ-
আল্লাহ তা’আলা এরশাদ করেন,
“স্মরণ কর যখন তোমার প্রতিপালক ফেরেশতাগণকে বললেন, কাদা মাটি দ্বারা আমি মানুষ সৃষ্টি করতে যাচ্ছি। যখন আমি তাকে সুঠাম করব এবং তাতে আমার রুহ্ সঞ্চার করব, তখন তোমরা তার প্রতি সিজদাবনত হয়ো” (সূরা হিজর: ২৮)
হযরত মাওলানা মুফতি মুহাম্মদ শফী র. প্রণীত, মাওলানা মুহিউদ্দীন খান অনুদিত তফসীরে মা’আরেফুল কোরআন ৫ম খন্ডে ২৮৭-২৮৮ পাতায় লেখা আছে, “রুহ্ দুই প্রকারঃ স্বর্গজাত ও মর্ত্যজাত। স্বর্গজাত রুহ্ আল্লাহ তা’আলার একটি একক সৃষ্টি। এর স্বরুপ দুর্জ্ঞেয়। অন্তর্দৃষ্টিসম্পন্ন মনীষিগণ এর আসল স্থান আরশের উপর দেখতে পান। কেননা, এটা আরশের চাইতেও সূক্ষ্ম। স্বর্গজাত রুহ্ অন্তর্দৃষ্টিতে উপর-নিচে পাঁচটি স্তরে অনুভব করা হয়। পাঁচটি স্তর এইঃ কল্ব, রুহ্, সির, খফী, আখফা -- এগুলো আদেশ-জগতের সূক্ষ্ম তত্ত্ব।
মর্ত্যজাত রুহ্ হচ্ছে ঐ সূক্ষ্ম বাষ্প, যা মানবদেহের চার উপাদান অগ্নি, পানি, মৃত্তিকা ও বায়ু থেকে উৎপন্ন হয় -- এগুলো সৃষ্টি-জগতের সূক্ষ্ম তত্ত্ব। এই মর্ত্যজাত রুহ্ কেই নফ্স বলা হয়।
আল্লাহ তা’আলা মর্ত্যজাত রুহ্ কে- যাকে নফস বলা হয়- উপরোক্ত স্বর্গজাত রুহ্ এর আয়নায় পরিনত করে দিয়েছেন। আয়নাকে সূর্যের বিপরীতে রাখলে যেমন অনেক দূরে অবস্থিত থাকা সত্ত্বেও তাতে সূর্যের ছবি প্রতিফলিত হয়, সূর্য কিরনে আয়নাও উজ্জল হয় এবং তাতে সূর্যের উত্তাপও এসে যায়, যা কাপড়কে জ্বালিয়ে দিতে পারে; তেমনিভাবে স্বর্গজাত রুহ্ এর ছবি মর্ত্যজাত রুহ্ এর আয়নায় প্রতিফলিত হয়; যদিও তা মৌলিকত্বের কারনে অনেক উর্দ্ধে ও দূরত্বে অবস্থিত থাকে। প্রতিফলিত হয়ে স্বর্গজাত রুহ্ এর গুণাগুন ও প্রতিক্রিয়া মর্ত্যজাত রুহের মধ্যে স্থানান্তির করে দেয়। নফসে সৃষ্ট এসব প্রতিক্রিয়াকেই আংশিক আত্মা বলা হয়।
মর্ত্যজাত রুহ্ তথা নফস স্বর্গজাত রুহ্ থেকে প্রাপ্ত গুণাগুন ও প্রতিক্রিয়াসহ সর্বপ্রথম মানবদেহের হৃদপিন্ডের সাথে সম্পর্কযুক্ত হয়। এ সম্পর্কেরই নাম হায়াত ও জীবন। মর্ত্যজাত রুহের সম্পর্কের ফলে সর্বপ্রথম মানুষের হৃদপিন্ডে জীবন ও ঐ সব বোধশক্তি সৃষ্টি হয়, যে গুলোকে নফস স্বর্গজাত রুহ্ থেকে লাভ করে। মর্ত্যজাত রুহ্ সমগ্র দেহে বিস্তৃত সূক্ষ্ম শিরা-উপশিরায় সংক্রমিত হয়। এভাবে সে মানবদেহের প্রতিটি অংশে ছড়িয়ে পড়ে।
মানবদেহের মর্ত্যজাত রুহের সংক্রমিত হওয়াকেই রুহ্ তথা আত্মা ফুঁকা বা আত্মা সঞ্চারিত করা বলে ব্যক্ত করা হয়েছে। কেননা, এ সংক্রমন কোন বস্তুতে ফুঁকভরার সাথে খুবই সামঞ্জস্যশীল।
আলোচ্য আয়াতে আল্লাহ তা’আলা রুহ্কে নিজের সাথে সম্বন্ধযুক্ত করে বলেছেন, যাতে সমগ্র সৃষ্টজীবের মধ্যে মানবাত্মার শ্রেষ্ঠত্ব ফুটে উঠে। কারন মানবাত্মা উপকরণ ব্যতীত একমাত্র আল্লাহ্র আদেশেই সৃষ্ট হয়েছে।”
আল্লামা ইবনুল কায়্যিম জাওযিয়াহ্ র. প্রণীত এবং হাফেয মাওলানা মুজীবুর রহমান অনুদিত রুহ্ কিতাবের ৫৯-৬০ পাতায় লেখা আছে, আল্লাহ তা’আলা এরশাদ করেন,
“রুহ্ এবং উহাকে সুগঠিতরুপে সৃষ্টিকারীর শপথ, যিনি তাদের অন্তরে ভাল এবং মন্দ ঢেলে দিয়েছেন। (সূরা শামস: ৭-৮)
এখানে আল্লাহ তা’আলা রুহ্কে সুগঠিত করার কথা ব্যক্ত করেছেন, যেমন অন্যত্র শরীরকে সুগঠিত করার কথা ব্যক্ত করেছেন। যেমন- আল্লাহ তা’আলা এরশাদ করেন,
‘যিনি তোমাকে সৃষ্টি করেছেন, অতঃপর সুগঠিত করেছেন এবং সামঞ্জস্যপূর্ণ করেছেন।’ (সূরা ইনফিতার: ৭)
প্রকৃতপক্ষে শরীরকে সুগঠিত করা হয় রুহের জন্যেই, যেন উহা রুহের আধার হতে পারে-- সুতরাং রুহের গঠন মুখ্য আর দেহের গঠন গৌণ। কোন বস্তুর আধার যেমন বস্তুটির আবাসস্থল হয়ে থাকে, তেমনি দেহ হল রুহের আবাসস্থল। উপরোক্ত আলোচনার দ্বরা বুঝা গেল, রুহ্ এরও আকার-অকৃতি আছে এবং দেহের সাথে মিলে বাস্তব আকার ধারণ করে। ফলে মানুষ একে অপর থেকে পৃথক হয়ে পড়ে। দেহ যেমন রুহ্ এর দ্বারা প্রভাবান্বিত হয় এবং নিজেও রুহ্ এর ওপর প্রভাব বিস্তার করে, তেমনই রুহ্ও দেহের ওপর প্রভাব ফেলে এবং তার পক্ষ থেকে প্রভাবান্বিত হয়। এবং দেহ রুহ্ এর নির্মলতা ও পংকিলতার দ্বারা প্রভাবিত হয়ে নির্মল ও পংকিল রুপ ধারণ করে। এক কথায় বলতে গেলে দেহ এবং আত্মার মধ্যে যেমন গভীর সংযোগ ও সম্বন্ধ, এমনটি আর কোথাও নেই।”
মা’আরেফুল কোরআন ৮ম খন্ডে ৭৯০-৭৯১ পাতায় লেখা আছে, “আল্লাহ তা’আলা মানুষের নফস সৃষ্টি করেছেন, অতঃপর অন্তরে অসৎ কর্ম ও সৎ কর্ম উভয়ের প্রেরণা জাগ্রত করেছেন। উদ্দেশ্য এই যে, মানব সৃষ্টিতে আল্লাহ তা’আলা গোনাহ্ ও ইবাদত উভয় কর্মের যোগ্যতা রেখেছেন, অতঃপর তাকে বিশেষ এক প্রকার ক্ষমতা দিয়েছেন, যাতে সে স্বেচ্ছায় গোনাহের পথ অবলম্বন করে অথবা ইবাদতের পথ। যখন সে নিজ ইচ্ছায় ও ক্ষমতায় এতদুভয়ের মধ্য থেকে কোন এক পথ অবলম্বন করে, তখন এই ইচ্ছা ও ক্ষমতার ভিত্তিতেই সে সওয়াব অথবা আযাবের যোগ্য হয়। এই তফসীর অনুযায়ী এরুপ প্রশ্ন তোলার অবকাশ নেই যে, মানুষের সৃষ্টির মধ্যেই যখন পাপ ও ইবাদত নিহিত আছে, তখন সে তা করতে বাধ্য, এর জন্য সে কোন সওয়াব অথবা আযাবের যোগ্য হবে না। একটি হাদীস থেকে এই তফসীর গৃহীত হয়েছে। সহীহ্ মুসলিমে আছে যে, তফসীর সম্পর্কিত এক প্রশ্নের জবাবে রসূলুল্লাহ্ সা. আলোচ্য আয়াত তিলওয়াত করেন। এ থেকে বোঝা যায় যে, আল্লাহ তা’আলা মানুষের মধ্যে গোনাহ্ ও ইবাদতের যোগ্যতা গচ্ছিত রেখেছেন, কিন্তু তাকে কোন একটি করতে বাধ্য করেন নি বরং তাকে উভয়ের মধ্য থেকে যে কোন একটি করার ক্ষমতা দান করেছেন।”
আল্লাহ তা’আলা মর্ত্যজাত রুহ্ কে- যাকে নফস বলা হয়- উপরোক্ত স্বর্গজাত রুহ্ এর আয়নায় পরিনত করে দিয়েছেন। আয়নাকে সূর্যের বিপরীতে রাখলে যেমন অনেক দূরে অবস্থিত থাকা সত্ত্বেও তাতে সূর্যের ছবি প্রতিফলিত হয়, সূর্য কিরনে আয়নাও উজ্জল হয় এবং তাতে সূর্যের উত্তাপও এসে যায়, যা কাপড়কে জ্বালিয়ে দিতে পারে; তেমনিভাবে স্বর্গজাত রুহ্ এর ছবি মর্ত্যজাত রুহ্ এর আয়নায় প্রতিফলিত হয়; যদিও তা মৌলিকত্বের কারনে অনেক উর্দ্ধে ও দূরত্বে অবস্থিত থাকে। প্রতিফলিত হয়ে স্বর্গজাত রুহ্ এর গুণাগুন ও প্রতিক্রিয়া মর্ত্যজাত রুহের মধ্যে স্থানান্তির করে দেয়। নফসে সৃষ্ট এসব প্রতিক্রিয়াকেই আংশিক আত্মা বলা হয়।
মর্ত্যজাত রুহ্ তথা নফস স্বর্গজাত রুহ্ থেকে প্রাপ্ত গুণাগুন ও প্রতিক্রিয়াসহ সর্বপ্রথম মানবদেহের হৃদপিন্ডের সাথে সম্পর্কযুক্ত হয়। এ সম্পর্কেরই নাম হায়াত ও জীবন। মর্ত্যজাত রুহের সম্পর্কের ফলে সর্বপ্রথম মানুষের হৃদপিন্ডে জীবন ও ঐ সব বোধশক্তি সৃষ্টি হয়, যে গুলোকে নফস স্বর্গজাত রুহ্ থেকে লাভ করে। মর্ত্যজাত রুহ্ সমগ্র দেহে বিস্তৃত সূক্ষ্ম শিরা-উপশিরায় সংক্রমিত হয়। এভাবে সে মানবদেহের প্রতিটি অংশে ছড়িয়ে পড়ে।
মানবদেহের মর্ত্যজাত রুহের সংক্রমিত হওয়াকেই রুহ্ তথা আত্মা ফুঁকা বা আত্মা সঞ্চারিত করা বলে ব্যক্ত করা হয়েছে। কেননা, এ সংক্রমন কোন বস্তুতে ফুঁকভরার সাথে খুবই সামঞ্জস্যশীল।
আলোচ্য আয়াতে আল্লাহ তা’আলা রুহ্কে নিজের সাথে সম্বন্ধযুক্ত করে বলেছেন, যাতে সমগ্র সৃষ্টজীবের মধ্যে মানবাত্মার শ্রেষ্ঠত্ব ফুটে উঠে। কারন মানবাত্মা উপকরণ ব্যতীত একমাত্র আল্লাহ্র আদেশেই সৃষ্ট হয়েছে।”
আল্লামা ইবনুল কায়্যিম জাওযিয়াহ্ র. প্রণীত এবং হাফেয মাওলানা মুজীবুর রহমান অনুদিত রুহ্ কিতাবের ৫৯-৬০ পাতায় লেখা আছে, আল্লাহ তা’আলা এরশাদ করেন,
“রুহ্ এবং উহাকে সুগঠিতরুপে সৃষ্টিকারীর শপথ, যিনি তাদের অন্তরে ভাল এবং মন্দ ঢেলে দিয়েছেন। (সূরা শামস: ৭-৮)
এখানে আল্লাহ তা’আলা রুহ্কে সুগঠিত করার কথা ব্যক্ত করেছেন, যেমন অন্যত্র শরীরকে সুগঠিত করার কথা ব্যক্ত করেছেন। যেমন- আল্লাহ তা’আলা এরশাদ করেন,
‘যিনি তোমাকে সৃষ্টি করেছেন, অতঃপর সুগঠিত করেছেন এবং সামঞ্জস্যপূর্ণ করেছেন।’ (সূরা ইনফিতার: ৭)
প্রকৃতপক্ষে শরীরকে সুগঠিত করা হয় রুহের জন্যেই, যেন উহা রুহের আধার হতে পারে-- সুতরাং রুহের গঠন মুখ্য আর দেহের গঠন গৌণ। কোন বস্তুর আধার যেমন বস্তুটির আবাসস্থল হয়ে থাকে, তেমনি দেহ হল রুহের আবাসস্থল। উপরোক্ত আলোচনার দ্বরা বুঝা গেল, রুহ্ এরও আকার-অকৃতি আছে এবং দেহের সাথে মিলে বাস্তব আকার ধারণ করে। ফলে মানুষ একে অপর থেকে পৃথক হয়ে পড়ে। দেহ যেমন রুহ্ এর দ্বারা প্রভাবান্বিত হয় এবং নিজেও রুহ্ এর ওপর প্রভাব বিস্তার করে, তেমনই রুহ্ও দেহের ওপর প্রভাব ফেলে এবং তার পক্ষ থেকে প্রভাবান্বিত হয়। এবং দেহ রুহ্ এর নির্মলতা ও পংকিলতার দ্বারা প্রভাবিত হয়ে নির্মল ও পংকিল রুপ ধারণ করে। এক কথায় বলতে গেলে দেহ এবং আত্মার মধ্যে যেমন গভীর সংযোগ ও সম্বন্ধ, এমনটি আর কোথাও নেই।”
মা’আরেফুল কোরআন ৮ম খন্ডে ৭৯০-৭৯১ পাতায় লেখা আছে, “আল্লাহ তা’আলা মানুষের নফস সৃষ্টি করেছেন, অতঃপর অন্তরে অসৎ কর্ম ও সৎ কর্ম উভয়ের প্রেরণা জাগ্রত করেছেন। উদ্দেশ্য এই যে, মানব সৃষ্টিতে আল্লাহ তা’আলা গোনাহ্ ও ইবাদত উভয় কর্মের যোগ্যতা রেখেছেন, অতঃপর তাকে বিশেষ এক প্রকার ক্ষমতা দিয়েছেন, যাতে সে স্বেচ্ছায় গোনাহের পথ অবলম্বন করে অথবা ইবাদতের পথ। যখন সে নিজ ইচ্ছায় ও ক্ষমতায় এতদুভয়ের মধ্য থেকে কোন এক পথ অবলম্বন করে, তখন এই ইচ্ছা ও ক্ষমতার ভিত্তিতেই সে সওয়াব অথবা আযাবের যোগ্য হয়। এই তফসীর অনুযায়ী এরুপ প্রশ্ন তোলার অবকাশ নেই যে, মানুষের সৃষ্টির মধ্যেই যখন পাপ ও ইবাদত নিহিত আছে, তখন সে তা করতে বাধ্য, এর জন্য সে কোন সওয়াব অথবা আযাবের যোগ্য হবে না। একটি হাদীস থেকে এই তফসীর গৃহীত হয়েছে। সহীহ্ মুসলিমে আছে যে, তফসীর সম্পর্কিত এক প্রশ্নের জবাবে রসূলুল্লাহ্ সা. আলোচ্য আয়াত তিলওয়াত করেন। এ থেকে বোঝা যায় যে, আল্লাহ তা’আলা মানুষের মধ্যে গোনাহ্ ও ইবাদতের যোগ্যতা গচ্ছিত রেখেছেন, কিন্তু তাকে কোন একটি করতে বাধ্য করেন নি বরং তাকে উভয়ের মধ্য থেকে যে কোন একটি করার ক্ষমতা দান করেছেন।”
রুহ্ প্রবেশকালীন ঘটনা..
আল্লামা ইবনে কাছীর র. প্রণীত আল-কাউসার প্রকাশনী কর্তৃক প্রকাশিত কাসাসুল আম্বিয়া কিতাবের ৩১ পাতায় লেখা আছে, “যখন রুহ্ তাঁর মাথায় প্রবেশ করে, তখন তিনি হাঁচি দেন। ফেরেশতাগণ বললেন, আপনি ‘আলহামদুলিল্লাহ্’ (সকল প্রশংসা আল্লাহ’র জন্য!) বলুন। তিনি ‘আলহামদুলিল্লাহ্’ বললেন। জবাবে আল্লাহ তা’আলা বললেন: ইয়ারহামাকুল্লাহ্ (তোমার রব তোমাকে রহম করুন)! তারপর রুহ্ আদম আ. এর চোখে প্রবেশ করলে তিনি জান্নাতের ফল-ফলাদির প্রতি দৃষ্টিপাত করেন। এবার রুহ্ তাঁর পেটে প্রবেশ করলে তাঁর মনে খাওয়ার আকাঙ্খা জাগে। ফলে রুহ্ পা পর্যন্ত পৌঁছানোর আগেই তড়িঘড়ি করে জান্নাতের ফল-ফলাদির দিকে ছুটে যান। একারনেই আল্লাহ তা’আলা বলেনঃ ‘মানুষ সৃষ্টিগতভাবেই ত্বরাপ্রবণ!’ (সূরা আম্বিয়া: ৩৭)”
আল্লাহ তা’আলা এরশাদ করেন,
“যখন আমি ফেরেশতাদের বললাম : তোমরা আদমকে সিজদা করো! তখন ইবলিশ ছাড়া সকলেই সিজদা করল, সে অমান্য করল ও অহঙ্কার করল।” (সূরা বাকারা: ৩৪)
“আমি যখন তোমাকে আদেশ করলাম, তখন কী সে তোমাকে সিজদা করতে বারণ করল ? সে বলল, আমি তাঁর চেয়ে শ্রেষ্ঠ; আমাকে আপনি অগ্নি দ্বারা সৃষ্টি করেছেন এবং তাকে সৃষ্টি করেছেন কাদামাটি দিয়ে।” (সূরা আরাফ: ১১-১২)
“আল্লাহ তা’আলা বললেন, তবে তুমি এখান থেকে বের হয়ে যাও। কারন, তুমি বিতাড়িত এবং কিয়ামত পর্যন্ত তোমার প্রতি রইল লানত। সে বলল, হে আমার প্রতিপালক! আপনি আমাকে পুনরুত্থান দিবস পর্যন্ত অবকাশ দিন। আল্লাহ তা’আলা বললেন, যাও অবধারিত সময় আসা পর্যন্ত তোমাকে অবকাশ প্রাপ্তদের অন্তর্ভুক্ত করা হল। সে বলল, হে আমার প্রতিপালক! আপনি যে আমাকে পথভ্রষ্ট করলেন, সে জন্য আমি পৃথিবীতে পাপকর্মকে মানুষের সামনে শোভন করে উপস্থাপন করব এবং আপনার মনোনীত বান্দাদের ছাড়া তাদের সকলকেই আমি বিপথগামী করে ছাড়ব।” (সূরা হিজর; ৩২-৪০)
“ইবলিস বলল, আপনি আমাকে শাস্তি দান করলেন, তাই আমিও নিঃসন্দেহে আপনার সরল পথে মানুষের জন্য ওঁৎ পেতে থাকব। তারপর আমি নিশ্চয় তাদের সম্মুখ, পশ্চাৎ, ডান ও বাম দিক থেকে তাদের কাছে আসব আর আপনি তাদের অধিকাংশকেই কৃতজ্ঞ পাবেন না।” (সূরা আ’রাফ: ১৬-১৭)
“আমি যখন তোমাকে আদেশ করলাম, তখন কী সে তোমাকে সিজদা করতে বারণ করল ? সে বলল, আমি তাঁর চেয়ে শ্রেষ্ঠ; আমাকে আপনি অগ্নি দ্বারা সৃষ্টি করেছেন এবং তাকে সৃষ্টি করেছেন কাদামাটি দিয়ে।” (সূরা আরাফ: ১১-১২)
“আল্লাহ তা’আলা বললেন, তবে তুমি এখান থেকে বের হয়ে যাও। কারন, তুমি বিতাড়িত এবং কিয়ামত পর্যন্ত তোমার প্রতি রইল লানত। সে বলল, হে আমার প্রতিপালক! আপনি আমাকে পুনরুত্থান দিবস পর্যন্ত অবকাশ দিন। আল্লাহ তা’আলা বললেন, যাও অবধারিত সময় আসা পর্যন্ত তোমাকে অবকাশ প্রাপ্তদের অন্তর্ভুক্ত করা হল। সে বলল, হে আমার প্রতিপালক! আপনি যে আমাকে পথভ্রষ্ট করলেন, সে জন্য আমি পৃথিবীতে পাপকর্মকে মানুষের সামনে শোভন করে উপস্থাপন করব এবং আপনার মনোনীত বান্দাদের ছাড়া তাদের সকলকেই আমি বিপথগামী করে ছাড়ব।” (সূরা হিজর; ৩২-৪০)
“ইবলিস বলল, আপনি আমাকে শাস্তি দান করলেন, তাই আমিও নিঃসন্দেহে আপনার সরল পথে মানুষের জন্য ওঁৎ পেতে থাকব। তারপর আমি নিশ্চয় তাদের সম্মুখ, পশ্চাৎ, ডান ও বাম দিক থেকে তাদের কাছে আসব আর আপনি তাদের অধিকাংশকেই কৃতজ্ঞ পাবেন না।” (সূরা আ’রাফ: ১৬-১৭)
কাসাসুল আম্বিয়া কিতাবের ৪৯-৫০ পাতায় লেখা আছে, “আল্লাহ তা’আলা ইবলিসকে জান্নাত থেকে বের করে দেন। আদম আ. কে জান্নাতে বসবাস করতে দেন। আদম আ. তথায় নিঃসঙ্গ একাকী ঘুড়ে বেড়াতে থাকেন। সেখানে তাঁর স্ত্রী নেই, যার কাছে গিয়ে একটু শান্তি লাভ করা যায়। এক সময় তিনি ঘুমিয়ে পড়েন। জাগ্রত হয়ে দেখতে পান, তাঁর শিয়রে একজন নারী উপবিষ্ট রয়েছেন। আল্লাহ তা’আলা তাঁকে আদম আ. - এর পাঁজরের হাড় থেকে সৃষ্টি করেন। তাঁকে দেখে আদম আ. জিজ্ঞাসা করলেন, তুমি কে হে ? তিনি বললেনঃ আমি একজন নারী। আদম আ. বললেন, তোমাকে কেন সৃষ্টি করা হয়েছে ? জবাবে তিনি বললেন, যাতে আপনি আমার কাছে শান্তি পান। তখন ফেরেশতাগণ আদম আ. - এর জ্ঞান যাঁচাই করার উদ্দেশ্যে জিজ্ঞাসা করলেন, হে আদম! বলুন তো, ওনার নাম কী ? আদম আ. বললেন, হাওয়া। তাঁরা আবার জিজ্ঞাসা করলেন, হাওয়া নাম হল কেন ? আদম আ. বললেন, কারন তাকে ‘হাই’ (জীবন্ত সত্তা) থেকে সৃষ্টি করা হয়েছে।... আবু হুরাইরা রাযি. বলেন, রসূলুল্লাহ সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেনঃ মহিলাদের ব্যাপারে তোমরা আমার সদুপদেশ গ্রহণ করো। কেননা নারীদেরকে পাঁজরের হাড় থেকে সৃষ্টি করা হয়েছে। আর পাঁজরের উপরের অংশটুকু সর্বাধিক বাঁকা। যদি তোমরা তা সোজা করতে যাও, তা হলে ভেঙে ফেলবে এবং আপন অবস্থায় ছেড়ে দিলে তা বাঁকাই থেকে যাবে। অতএব মহিলাদের ব্যাপারে তোমরা আমার সদুপদেশ গ্রহণ করো।”
আল্লাহ তা’আলা এরশাদ করেন,
“হে মানব জাতি! তোমরা তোমাদের রবকে ভয় কর, যিনি তোমাদেরকে এক ব্যাক্তি থেকে সৃষ্টি করেছেন এবং যিনি তা হতে তার সঙ্গিনীকে সৃষ্টি করেছেন এবং তাদের দূজন থেকে বহু নর-নারী ছড়িয়ে দিয়েছেন।” (সূরা আনফাল: ১)
“আমি বললাম, হে আদম! তুমি ও তোমার সঙ্গিনী জান্নাতে বসবাস কর এবং যেথায় ইচ্ছে আহার করো; কিন্তু এ বৃক্ষের নিকটবর্তী হয়ো না, তা হলে তোমরা অন্যায়কারীদের অন্তর্ভূক্ত হবে।” (সূরা বাকারা: ৩৫)
“আমি তো ইতোপূর্বে আদমের প্রতি নির্দেশ দিয়েছিলাম। কিন্তু সে ভূলে গিয়েছিল। আমি তাকে সংকল্পে দৃঢ় পাই নি। স্মরণ কর! যখন আমি ফেরেশতাদের বললাম, অদমের প্রতি সিজদা করো! তখন ইবলিস ছাড়া সকলেই সিজদা করল; সে অমান্য করল। তারপর আমি বললাম, হে আদম! এ তোমার ও তোমার স্ত্রীর শত্রু। সুতরাং সে যেন কিছুতেই তোমাদেরকে জান্নাত থেকে বের করে না দেয়, দিলে তোমরা দুঃখ পাবে। তোমার জন্য এ-ই রইল, তুমি জান্নাতে ক্ষুধার্থ হবে না, নগ্নও হবে না এবং তথায় পিপাসার্ত হবে না; রৌদ্রক্লিষ্টও হবে না। তারপর শয়তান তাকে কুমন্ত্রণা দিল। সে বলল, হে আদম! আমি কি তোমাকে বলে দিব অনন্ত জীবনপ্রদ গাছের কথা ও অক্ষয় রাজ্যের কথা ? তারপর তারা তা থেকে ভক্ষণ করল; তখন তাদের লজ্জাস্থান তাদের কাছে প্রকাশ হয়ে পড়ল এবং তারা জান্নাতের গাছের পাতা দিয়ে নিজেদের আবৃত করতে লাগল। আদম তার প্রতিপালকের হুকুম অমান্য করল। ফলে সে ভ্রমে পতিত হল। এরপর তার প্রতিপালক তাকে মনোনীত করলেন। তার প্রতি ক্ষমাপরায়ন হলেন ও তাকে পথ-নির্দেশ করলেন।
তিনি বললেন, তোমরা একই সঙ্গে জান্নাত থেকে নেমে যাও! তোমরা পরস্পর পরস্পরের শত্রু, পরে আমার পক্ষ থেকে তোমাদের কাছে সৎ নির্দেশ আসলে যে আমার নির্দেশ অনুসরন করবে, সে বিপদগামী হবে না ও দুঃখ-কষ্ট পাবে না।” (সূরা ত্বহা: ১১৫-১২৩)
“তোমরা নেমে যাও! তোমরা এক অপরের শত্রু এবং পৃথিবীতে তোমাদের কিছুকাল বসবাস ও জীবিকা রয়েছে।” (সূরা বাকারা: ২৪)
(উপরে বর্ণিত আয়াত সমূহের অনুবাদ - যেগুলোর রেফারেন্স উল্লেখ করা হয়নি - কাসাসুল আম্বিয়া কিতাবে আদম আ. -এর সৃষ্টি ইতিহাস থেকে সংগৃহীত হয়েছে।)
উপরে বর্ণিত আয়াত সমূহের তরজমা ও ঘটনা থেকে “GO BACK” procedure of Real Homoeopathic Therapeutic System যে শিক্ষা নিতে পারে -
১. সৃষ্টিকর্তা ‘মানুষ’ কে তাঁর প্রতিনিধি এবং সৃষ্টির শ্রেষ্ঠ হিসেবে সৃষ্টি করেছেন। যেহেতু সকল সৃষ্টির সৃষ্টিকর্তা আল্লাহ তা’আলা নিজ রুহ্ মানুষের মধ্যে সঞ্চারিত করেছেন, সেহেতু পৃথিবীর সৃষ্টিকূলের মধ্যে সৃষ্টিকর্তার সান্নিধ্যলাভে মানুষের ability unlimited . অতএব জীবনের মহত্তর উদ্দেশ্য সাধনে আত্মনিয়োগ করা মানুষের কর্তব্য।
২. স্বর্গজাত ‘রুহ্’ এর মর্ত্যজাত রুপ ‘নফস’ এর উপস্থিতি জীবন্ত মানবদেহকে ‘মানুষ’ হিসেবে স্বীকৃতি দেয়। এই নফস এর মধ্যে রয়েছে ‘ভাল’ ও ‘মন্দ’ তথা সৎ কর্ম ও অসৎ কর্মের প্রেরণা অর্থাৎ Creative force and Destructive force, এর একটিকে Vital force অন্যটিকে Morbific agent anemical to life বলা যেতে পারে।
৩. আদম আ. কে পুরুষ অবয়বে সৃষ্টি করা হলেও তাঁর জীবন্ত সত্তা থেকেই নারী’র সৃষ্টি, সুতরাং আদম আ. -এর স্বভাব অর্থ নারী-পুরুষ উভয়ের স্বভাব তথা মানুষের স্বভাব। তবে সৃষ্টিগতভাবে নারী ‘বাঁকা’, তাই তাঁর বিশেষত্ব বিবেচনায় রাখতে হবে।
৪. মানুষের মধ্যে ‘চোখ’ লালসা তৈরী করে, ‘পেট’ ক্ষুধা- কামনা- আকাঙ্খা তৈরী করে, ‘হাত’ ও ‘পা’ -এর শক্তি প্রবৃত্তি পূরণে তাড়া-হুড়ো ভাব সৃষ্টি করে। কিন্তু ‘মস্তিষ্ক’ তথা Sixth sense এ যদি পবিত্র মনোভাব ‘আলহামদুলিল্লাহ্’ অর্থাৎ সকল প্রশংসা আল্লাহ’র জন্য - তথা সন্তুষ্টি অর্জন করা যায় তবে মানুষের Sixth sense হবে কোরআন শরীফের সূরা শোয়ারা: ৮৯ নং আয়াত অনুযায়ী ‘কল্বিন সালিম’ অর্থাৎ ‘সুস্থ বিবেক’। তখন ‘ইয়ার হামাকুল্লাহ্’ অর্থাৎ রব এর পক্ষ থেকে রহমত তথা সৃষ্টিকর্তার করুণা লাভের আশা থাকে।
৫. মানুষ সৃষ্টির শুরু থেকেই opposite sex থেকে শান্তি পেতে চায়।
৬. সৃষ্টি বা জন্মের সময়ই মানুষের মধ্যে প্রবৃত্তিগত নেতিবাচক মনোভাব বা philosophy রয়েছে। জীবনের পরিভ্রমনে ক্রমে ক্রমে তা বিকশিত হয়। “ That patient has the same disease he had when he was born” এই disease -গুলিকে আমরা True diseaseবলতে পারি।
৭. মানুষ সৃষ্টিকর্তার নির্দেশ পালনে বা সংকল্পে দৃঢ় থাকে না, বরং ভোগ ও সম্পদের প্রলোভনে বা কুমন্ত্রণায় ভূল করে।
৮. মানুষ ও শয়তান পরস্পর পরস্পরের শত্রু, তবে এ শত্রুতা শয়তানের পক্ষ থেকে শুরু হয়েছে, অব্যাহত আছে এবং থাকবে। যেহেতু শত্রুতা মানুষের পক্ষ থেকে শুরু হয়নি সেহেতু এ ব্যাপারে মানুষ বে-খেয়াল থাকে, সেকারনে শয়তানের প্রথম প্ররোচণাতেই মানুষ বিভ্রান্ত হয়। শয়তান আগুনের তৈরী, মানুষের নফস এও সৃষ্টি-জগতের সত্তা হিসেবে আগুন রয়েছে। অর্থাৎ মানুষ ‘আগুন’ নিয়েই পৃথিবীতে এসেছে। মানুষ যদি সতর্ক না থাকে ‘আগুন’ তাকে জ্বালিয়েই ছাড়বে। “ Psora is the evolution of the state of man's will, the ultimate of hes sin. ”
৯. তওবা করলে আল্লাহ তা’আলার দয়ায় পাপের ক্ষমা হয়, কিন্তু প্রবৃত্তিগত ভূলের ফল হিসেবে সৃষ্টিকর্তার মনোনীত ব্যাক্তিগণ ছাড়া সকল মানুষকে দুঃখ-কষ্ট ভোগ করতেই হবে। এ ব্যাপারে মুমিন-মুনাফিক-বেদ্বীন কোন প্রভেদ নেই। অন্তরে রোগ থাকলেই দুঃখ-কষ্টের নামান্তর রোগ-ভোগ ইত্যাদি দেখা দিবে। সুতরাং একে বলা যায় Results of disease.
১০. ‘সীরাতুল মুস্তাকিম’ তথা ‘সহজ সরল পথ’ মানুষকে পাপ ও ভূলের খেসারত তথা দুঃখ-কষ্ট , রোগ-ভোগ থেকে রক্ষা করতে পারে। মানব স্বাস্থ্য সুরক্ষায় প্রাকৃতিক চিকিৎসা পদ্ধতি হিসেবে Real Homoeopathy সেই সহজ সরল পথের একটি অংশ। কিন্তু মনে রাখতে হবে এ পদ্ধতি গ্রহণে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টির জন্য শয়তান এ পথে ওঁৎ পেতে বসে আছে এবং সে ‘অসত্য’ কে চমকপ্রদ উপস্থাপনায় মহোনীয় করে রাখছে।
১১. এ পৃথিবী মানুষের ক্ষনিকের বাসস্থান। রিজিক তথা জীবিকার পরিমান দ্বারা হায়াতের মেয়াদ নির্ধারিত, সুতরাং মৃত্যুও অবধারিত। আমাদের চেষ্টা থাকতে হবে মৃত্যুটা যেন অপেক্ষাকৃত শান্তি ও স্বস্তির হয়। সেকারনে সৃষ্টিকর্তার দয়া এবং ওষুধ হিসেবে Carbo veg. কে আমরা সবসময় স্মরণে রাখব!
আল্লাহ তা’আলার করুণা ছাড়া মুক্তি ও সাফল্য অসম্ভব। সৃষ্টিকর্তা আমাদের সহায় হউন!
Maasha Allah. Excellent writing. Everyone will be benefited. Prof. Saiful Islam, Dhaka.
ReplyDeletevery nice writin.
ReplyDeleteঅনেক কিছু শিখার আছে।